কৃষ্ণগহ্বরের নাম শুনে থাকলেও আদৌ সেইটা কী আর কেমন তা জানা নেই অনেকেরই। অথচ, অদ্ভুত এই কৃষ্ণগহ্বরে জানার আছে অনেক কিছু। আজ তবে জানা যাক এর অ্যানাটমি।
১.অ্যাক্রেশন ডিস্ক
এই অংশটি কৃষ্ণগহ্বরকে গতি লাভে সহায়তা করে। ফলে, কৃষ্ণগহবর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করতে পারে। গ্যাস, তারা, পাথর, ধুলো ও মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তু যখনই কৃষ্ণগহ্বরের ডিস্কের কাছে পড়ে, তখন ডিস্কের ঘূর্ণনের প্রভাবে সেগুলো গতি লাভ করে এবং কৃষ্ণগহ্বরের দিকে ছুটে যায়। সেসব বস্তু কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করার সাথে সাথে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎচুম্বকীয় রশ্মি নির্গত হয়। এর পরিমাণ এতই বেশি যে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে বসেই এটি শনাক্ত করতে পারেন। ঘটনা-দিগন্তের কাছাকাছি এসব একসাথে জড়ো হয় আরও দ্রুত ও তীব্রভাবে কৃষ্ণগহ্বরের দিকে ছুটতে থাকে। কিছু বস্তু কৃষ্ণগহবরের অনেক গভীরে চলে যায়। আবার কিছু পদার্থ বিস্ফোরিত হয়ে গহ্বরের বাইরে ঘুরতে থাকে।
২.পদার্থের ভারসাম্য ঘূর্ণন
অনেকে মনে করেন, কৃষ্ণগহ্বরে কোনো বস্তুই নিষ্কৃতি পায়না। কিন্তু এই বিষয়টা পুরোপুরিভাবে ঠিক নয়। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, কৃষ্ণগহ্বরের বাইরে থাকা পদার্থের এই ঘূর্ণি তৈরি হয় কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করেছে এমন বস্তু থেকেই। এগুলো অসামান্য গতি নিয়ে কৃষ্ণগহবর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ দারহামের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী কোনসটান্টিনোস গোরগাউলিয়াটোস বলেন, “এটা অনেকটা পৃথিবীর আশি শতাংশ পথ পাড়ি দিয়ে এক সেন্টিমিটার পাইপ থেকে বেরিয়ে আসা পানির মতো।”
বিজ্ঞানীদের তৈরিকৃত সবচেয়ে আধুনিক মডেল অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বরের প্রান্তে স্থান-কাল চাদরের মতো বেঁকে যায়। এর প্রভাবে চৌম্বকক্ষেত্র ও মহাজাগতিক ঘূর্ণন তৈরি হয়। এতে এ অঞ্চলের ভেতরে থাকা বস্তুগুলো আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে ছুটতে শুরু করে। এরপরে এগুলো ঘুরতে ঘুরতে শূন্যে নিক্ষিপ্ত হয়। একই সময়ে দ্বৈত-চৌম্বক বলের প্রভাবে পদার্থের চলার নতুন একটি পথ তৈরি হয়। চুম্বক বলরেখাগুলো পদার্থগুলোর গতিপথ বাঁকিয়ে দেয় এবং তাদেরকে আরও গতিশীল করে তোলে।
এ বস্তুগুলো তখন মহাবিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল কণায় পরিণত হয়। দ্বৈত-চৌম্বক বলের প্রভাবে এ বস্তুগুলো প্রায় আলোর গতিতে ছুটতে থাকে।
৩. ফটোস্ফিয়ার
ঘটনা দিগন্তের কাছাকাছি পৌঁছাতেই সকল বস্তু থেকে ফোটন নির্গত হতে থাকে। সাধারণত এসব ফোটন সরলপথে কৃষ্ণগহ্বরের বাইরের দিকে ছুটতে থাকে। কিন্তু, কৃষ্ণগহ্বরে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ফোটনের গতিপথ বেঁকে যায়। এর ফলে কৃষ্ণগহবর চারপাশে আমরা আলোর ঘূর্ণন দেখতে পাই।
৪. অভ্যন্তরীণ কক্ষপথ
অ্যাক্রেশন ডিস্কের প্রভাব এখানে তুলনামূলক কম। কোন বস্তু কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার আগেই চূড়ান্তভাবে এই অংশে এসে পৌঁছায়।
৫. ঘটনা দিগন্ত
কৃষ্ণগহ্বরের এই অংশেই কালো পর্দার শুরু। এ অংশে পৌঁছে গেলে কৃষ্ণগহ্বর থেকে আর কোনো বস্তু ফিরে আসতে পারে না। মোটকথা, এই অংশ থেকে কোনো বস্তু বেরিয়ে আসতে হলে তাকে আলোর গতির সমান গতিতে ছুটতে হবে; যা পুরো কৃষ্ণগহ্বরের ভরশক্তির সমান!
৬. সিঙ্গুলারিটি
কৃষ্ণগহ্বরে যেসকল বস্তু ও শক্তির শোষণ ঘটে সেগুলো জমা হয় এখানে। কৃষ্ণগহ্বরের এই ক্ষুদ্র বিন্দুতে সেগুলো ধীরে ধীরে জমা হতে থাকলে ক্রমে কৃষ্ণগহবর আকর্ষণ শক্তি বাড়তে থাকে।