আল কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান
ড.জাকির নায়েক
দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকেরা বিশ্বাস করতো যে, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে স
সূর্যসহ সবকিছু পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘুরছে। খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে টলেমির যুগ থেকে মহাবিশ্বের
ধারণা পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত সত্য হিসেবে প্রচলিত ছিল। ১৫১২ সালে নিকোলাস কোপারনিকাস তার ‘সূর্যকেন্দ্রিক গ্রহসংক্রান্ত গতিতত্ত্ব’ এতে বলেন যে, ‘সূর্য তার চতুর্দিকে ঘূর্ণায়ন গ্রহগুলোর সৌরজগতের
গতিহীন’। ১৬০৯ খ্রিঃ জার্মান বিজ্ঞানী ইউহান্নাস কেপলার’Astronomia Nova’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এ বইটিতে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, শুধুমাত্র গ্রহগুলোই সূর্যের চারদিকে ডিম্বাকৃতির কক্ষপাস পরিভ্রমণ করে না, বরং গ্রহগুলো তাদের নিজস্ব অক্ষে অসম গতিতে আবর্তন করে। এ জানের ফলে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের পক্ষে রাত্রি ও দিনের অনুক্রমসহ সৌরজগতের অনেক কাজপদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে।
এসব আবিষ্কারের পরেও বিশ্বাস করা হতো যে, সূর্য স্থির এবং এটি পৃথিবীর মত নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তন করে না। আমার মনে পড়ে যখন আমি স্কুলে পড়ি, তখন ভূগোল বই পড়ে এই ভুল ধারণাটি জেনেছি।
নিচের আয়াতটিকে মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করিঃ
وهو الذي خلق اليل والنهار والشمس والقمر كل في فلك يسبحون –
“তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।”
-সূরা আম্বিয়া ১৩০
উপরের আয়াতে ব্যবহৃত আরবী শব্দ হচ্ছে
(ইয়াছবাহুন)। এই শব্দটি be (সাবাহা) শব্দ থেকে
এসেছে। এ শব্দটি যেকোনো চলমান বস্তু থেকে উদ্ভূত গতি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। শব্দটি যদি মাটির উপরে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, তাহলে এর অর্থ হবে না যে, সে গড়াচ্ছে বরং এটি তার হাটা বা দৌড়ানোর দিকে ইঙ্গিত করবে। আবার শব্দটি যদি পানিতে অবস্থানরত কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, তাহলে এর অর্থ হবে না যে, সে ভাসছে বরং এটি তার সাঁতরানোর দিকে ইঙ্গিত করবে।
একইভাবে, যদি আপনি (ইয়াছবাহুন) শব্দটি কোন মহাকাশের কোন বস্তু, যেমন, সূর্যের জন্য ব্যবহার
করেন, তাহলে এটা শুধুমাত্র মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে উড়ার অর্থই বহন করে না, বরং এর অর্থ এটি এমনভাবে আবর্তিত হচ্ছে যে, এটি মহাশূন্যের ভেতর দিয়েও যাচ্ছে। অনেক স্কুলের পাঠ্যক্রমে এখন এ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যে, সূর্য তার কক্ষপথে আবর্তন করে। নিজের কক্ষপথে সূর্যের আবর্তন একটি যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করা যেতে পারে, যা সূর্যের ছবিটিকে একটি টেবিলের উপর প্রতিফলিত করে। এবং কেউ বিচারবুদ্ধিহীন না হলে সূর্যের ছবিটি পরীক্ষা করতে পারে। লক্ষণীয় যে, সূর্যের নিজস্ব
অবস্থান অঞ্চল আছে যা প্রতি ২৫ দিনে একটি বৃত্তাকারে আবর্তন করে, অর্থাৎ নিজের কক্ষপথের চতুর্দিকে ঘুরতে সূর্যের প্রায় ২৫ দিন সময় লাগে।
সূর্য প্রায় ২৪০ কি. মি./সে গতিতে মহাশূন্যের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে এবং আমাদের ছায়াপথের (মহাকাশে
নক্ষত্রপুঞ্জ বা নীহারিকাসৃষ্ট সুদীর্ঘ জ্যোতির্ময় বেষ্টনী) কেন্দ্রের চতুর্দিকে একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে প্রায় ২০০
মিলিয়ন বছর লাগে।
لا الشمس ينبغي لها أن تدرك القمر ولا الـيـل سـرابـق الـتـهـار – وكل في فلك
সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের।
প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে প্রদক্ষিন করে।” সূরা ইয়াসিনঃ ৪০
এ আয়াতটি আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে নির্দেশ করে;যেমন, সূর্য ও চন্দ্রের পৃথক পৃথক কক্ষপথের অস্তিত্ব এবং এগুলোর নিজস্ব গতিতে মহাশূন্যে ভ্রমণ। সৌরজগতকে নিয়ে সূর্য যে নির্দিষ্ট লক্ষে চলছে, তা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্তৃক সুনিশ্চিতভাবে আবিষ্কৃত সত্য। এটিকে ‘সৌর শৃঙ্গ’ বলা হয়। আসলে সৌরজগত মহাশূন্যে যে দিকে ধাবিত হয়, সে দিকটির অবস্থান যথার্থ ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আসলে সৌরজগত হারকিউলিসের কক্ষপথে অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর দিকে যাচ্ছে যার অবস্থান বর্তমানে খুব জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্য। পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘুরতে যে সময় লাগে, একই সময়ে চন্দ্র তার নিজস্ব কক্ষপথের চতুর্দিকে একবার চক্রাকারে আবর্তন করে। চন্দ্রের একটি পূর্ন চক্র সম্পন্ন করতে সাড়ে ২৯ দিন সময় লাগে। ভাবা উচিত নয় “কুরআনের জ্ঞানের উৎস কী?